হাফেজ হামেদ হাসান আজমগড়ী (রহ.)’র জীবন ও কর্মঃ
লেখক: মুহাম্মদ কায়ছার উদ্দীন মালেকী
শায়খুত তরীক্বত আলহাজ্ব হাফেজ হামেদ হাসান আজমগড়ী (রহ.) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর তরীক্বত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বিশ্বে তাঁর অসংখ্য-অগণিত অনুসারী; মানুষকে তরীক্বতের দীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তরীক্বত পন্থীদের কাছে তিনি আজমগড়ী হুজুর নামে সমধিক পরিচিত। তিনি সুদীর্ঘ ৪০ বছর তরীক্বতের প্রচার ও প্রসারে এক অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তিনি একাধিক আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ কর্তৃক আধ্যাত্মিক দীক্ষায় দীক্ষিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে, চিশতিয়া তরীক্বার সাধক পুরুষ মাওলানা শেখ নেজাবত আলী ও আবু হামেদ মিয়া করিম বখশ্, সাত তরীক্বার পীর সৈয়দ সূফি আবদুল বারী এবং মুজাদ্দেদীয়া তরীক্বার পীর শামসুল ওলামা সূফি গোলাম সালমানী আব্বাসী (রহ.) অন্যতম।
জন্ম ও শিক্ষাজীবনঃ-
১৮৭১/৭২ খ্রিস্টাব্দ এবং আরবী ১২৭৮/৭৯ হিজরীতে তাঁর জন্ম। তিনি ভারতের আজমগড় জেলার কোহন্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। আজমগড় স্থানে জন্মগ্রহণ করার কারণে অনেকেই তাঁকে আজমগড়ী বলে সম্বোধন করেন। তাঁর পিতা হচ্ছেন, চিশতিয়া তরীক্বার পীর হজরত আবু হামেদ মিয়া করিম বখশ্। তাঁর পিতামাতা দুজনেই ছিলেন পরহেজগার ও তরীক্বতপন্থী। তাঁরা মাওলানা শেখ নেজাবত আলীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন জরিপ বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা। এ সুবাধে তিনিও পিতার সাথে মাঝেমাঝে অবিভক্ত বাংলা এবং মিয়ারমারে সফর করতেন। তাঁর বাবা সরকারী জরিপের কাজের পাশাপাশি তরীক্বতের প্রচার ও প্রসারের কাজের আঞ্জাম দিতেন। তাঁর বাবার শিক্ষক মাওলানা শেখ নেজামত আলী’র পরামর্শে তােঁক মাদ্রাসা লাইনে পড়াশুনা করান। একদিন শেখ নেজামত আলী তাঁদের বাসায় আসেন এবং তাঁর সাথে পরিচয় হন এবং তাঁর প্রতি রুহানী তাওযাজ্জুহ প্রদান করে তাঁর আধ্যাত্মিক যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত হন এবং পিতাকে বলেন, আপনার ছেলে হামেদ হাসান কে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না করে মাদ্রাসা লাইনে পড়াশুনা করান; যাতে অনুপযুক্ত প্রশিক্ষণ তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে মেঘ না করে। তিনি ছিলেন আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ৩০ পারা কুরআন মুখস্তকারী যাকে আরবীতে হাফেজে কুরআন বলা হয়। তিনি তাঁর পিতা থেকে শরীয়ত এবং তরীক্বতরে নিযার্স জ্ঞান লাভ করেছিলেন। পরিবারিক আর্থিক দূরাস্থার কারণে বেশদূর পড়াশুনা করতে না পারলেও আরবী ব্যাকরণের মারফুয়াতের অধ্যায় পর্যন্ত পড়াশুনা শেষ করেন। অর্জিত জ্ঞানের পাশাপাশি ইলমে লাদুন্নীতে ভরপুর ছিলো তাঁর সিনা (বক্ষ)।
বড় হাফেজ হিসেবে সুপরিচিতি –
তৎকালীন সময়ে বড় হাফেজ হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিলো। এ হিসেবে তাঁর ক্বলব ছিলো স্বচ্ছ আয়নার মত। কারণ, যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করে এবং আল্লাহর জিকির করে সে নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয়ভাজন ও আপনজন। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই হৃদয়ে মরিচা ধরে, যেভাবে পানি লাগলে লোহায় মরিচা ধরে। রাসূল (দ.) কে জিজ্ঞাস করা হলো, এ মরিচা দূর করার উপায় কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বেশিবেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা ও কুরআন তেলাওয়াত করা (মিসকাতুল মাসাবীহ—২১৬৮)।’ অন্যত্রে বলা হয়েছে,‘আফজালুল ইবাদাতি তেলাওয়াতিল কুরআন”। একজন কুরআনে হাফেজের মযার্দা আল্লাহর দরবারে সুমহান। তাঁরা উভয় জগতে সম্মানিত ও পুরষ্কৃত।
আধ্যত্মিক জ্ঞানার্জনঃ-
সাত তরীক্বার সাধক পুরুষ সৈয়দ সূফি আবদুল বারী (রহ.) ছিলেন তাঁর সরাসরী পীর ও মুর্শিদ এবং তাঁর আব্বাজানের শিষ্য। এ সুবাধে কোন এক শুভক্ষণে তাঁর আব্বাজানের সাথে তাঁদের ঘরে মেহমান হয়ে আসেন, সূফি আবদুল বারী (রহ.) এবং আধ্যত্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তাঁকে সূফি আবদুল বারী শাহ্ (রহ.)’র হাতে তুলে দেন। তখন তিনি পরিপূর্ণ হাফেজে কুরআন এবং আরবী শিক্ষায় শিক্ষিত একজন যুবক। এমতাবস্থায় সৈয়দ আবদুল বারী শাহ্ (রহ.) তাঁকে তরীক্বতের প্রথম দায়রার শিক্ষা সহকারে বিশদভাবে রূহানী তাওয়াজ্জুহ ও নিসবত প্রদান করেন। এ রুহানী তাওয়াজ্জুহের ফলে তাঁর জীবনের নব অধ্যায় সূচিত হয়। এ আধ্যাত্মজ্ঞান অন্বেষণ ও রুহানী জগতের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছানোর জন্য তিনি প্রায় সময় ব্যাকুল থাকতেন! এ জ্ঞান অত্যন্ত দূর্লভ ও অদৃষ্টপূর্ব। যা পৃথিবীর কোন লাইব্রেরী পাওয়া যায় না; শুধুমাত্র ইনসানে কামেলদের সিনায় পাওয়া যায়। এ জ্ঞানের সংযোগস্থল সরাসরি হজরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত। পরবতীর্তে সৈয়দ আবদুল বারী শাহ্ (রহ.) তাঁকে আবারও দ্বিতীয় দায়রার শিক্ষা সহকারে বিশদভাবে রূহানী তাওয়াজ্জুহ ও ফায়েজ দানে ধন্য করেন। এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন একজন আত্মিক মহাপুরুষ ও আধ্যাত্ম জ্ঞানের ধারক ও বাহক।
মিয়ারমারে সফর, খেলাফত লাভ ও ইন্তেকালঃ–
১৯০১ সালে তিনি মিয়ারমারে সফর করেন এবং বেশ কিছু সময় সেখানে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। মিয়ারমারে শিক্ষকতা করা অবস্থায় চিঠির মারফতে জানতে পারলেন, সৈয়দ আবদুল বারী (রহ.) অত্যধিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এমনকি শরীরে গুটি বসন্ত দেখা দিয়েছে! সংবাদ শুনে, চাকরী থেকে অব্যাহতি নিয়ে স্বদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সূফি সাহেব ১৯০০ সালে চূড়ান্তভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিয়ুন! ইন্তেকালের পূব মুহূর্তে সকলের উপস্থিতিতে তিনি তাঁকে তরীক্বতের খেলাফত বখশিশ করেন। নজিবুন বুয়া (রহ.) এ সংবাদ শুনে বিস্মিতচিত্তে, সূফি আবদুল বারী (রহ.) কে বলেছিলেন, হামেদ হাসান কী এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? সূফি সাহেব (রহ.) বলেছিলেন, “আমি তো আছি” (অর্থাৎ তরীক্বতের কাজ করতে যেখানে অসুবিধা হবে সেখানে আমি সাহায্য করবো)। কিছুদিন পর দেশে ফিরেন এবং সূফি সাহেবের ইন্তেকালের খবর শুনেন। এদিকে নজিবুন বুয়া (রহ.) তাঁকে খেলাফত দানের শুভ সংবাদটি জানালেন। নজিবুন বুয়া (রহ.) কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, এটা কিভাবে সম্ভব! আমি তো নতুন! ইহা কেমনে হবে? তখন বুয়া (রহ.) সূফি সাহেবের উদ্ধৃতিটি শুনালেন। তিনি আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়প্রত্যয়ে এ মহান কাজে ব্রতি হন। সুদীর্ঘ হায়াতে জিন্দেগীতে দ্বিতীয় কোন পীর গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি স্বপ্নে অবগত হয়েছিলেন, ‘সৈয়দ সাহেব ই তাঁর জন্য যথেষ্ট’।
শামসুল ওলামা সূফি গোলাম সালমানী আব্বাসীর স্মরণাপন্নঃ-
সূফি সাহেবরের ইহজগৎ প্রস্তানের পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কারণ ইহজগতে প্রত্যেক মানুষের জন্য একজন গাইডলাইনার একান্ত প্রয়োজন। এ ব্যথিত মন নিয়ে তিনি দাদাপীর সূফি মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী (রহ.)’র স্বাক্ষাতে মিলিত হন। তিনি সালমানী সাহেবকে যথেষ্ট সমীহ ও ভক্তি করতেন। এ সুবাদে মাঝে মাঝে তাঁর সাথে দেখা করতেন। সালমানী সাহেব তাঁকেও খুবই আদর করতেন এবং বলতেন ‘সবাই আসে দুনিয়ার জন্য আর আপনি আসেন আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য; এজন্য আপনার এবং আপনার মুরিদের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা। আমি একজন তারেকুদ দুনিয়া নির্জনবাসী ফকির, দুনিয়া ও দুনিয়াদার লোকের সাথে আমার কী প্রয়োজন? কেউ আসে মামলা মোকাদ্দমার জন্য; আবার কেউ আসে সন্তানসন্ততির জন্য।’ বস্তুত! সালমানী সাহেব ছিলেন, কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার সরকারি শিক্ষক ও ভারতীয় উপমহাদেশের শামসুল ওলামা নামে সুপরিচিতজন। এ হিসেবে তাঁর পদমযার্দা ছিলো খুবই সুউচ্চ। এ হিসেবে নানান মানুষ নানান কাজে তাঁর কাছে আসা—যাওয়া করতেন। মাদ্রাসার ছাত্ররা আসত তালিম নেওয়ার জন্য এবং তাসাউফপন্থীরা আসত সত্য জ্ঞান অর্জনের জন্য। এ দৃশ্য ছিলো হাজারো লোকের ভীড় জমায়েত! তৎসময়ের সরকারি-বেসরকারী সকলেই তাঁকে এক নামে চিনতেন এবং সম্মান করতেন।
সূফি মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী (রহ.)’র নির্দেশক্রমে তরীক্বতের সফরঃ-
জুন থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত, তিনি বাড়িতেই থাকতেন, জমি সামলাতেন। আসন্ন মৌসুমের জন্য ফসল কাটা এবং বীজ বপনের কাজ শেষ হলে, তিনি জমির ব্যবস্থাপনা তার ছেলেদের হাতে অর্পণ করতেন এবং সালমানী সাহেব নির্দেশক্রমে তিন-চার মাস বিভিন্ন অঞ্চলে তরীক্বতের সফরে অতিবাহিত করতেন। সফরের জন্য তাঁর পিতা তাঁকে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম তরীক্বতের সফর করেন চট্টগ্রামে। তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার মুরিদরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কিছুদিন চট্টগ্রামে অবস্থান করেই স্বদেশে ফিরে যান। দ্বিতীয় বার আবারও চট্টগ্রামে সফরে আসেন। তাঁর জ্যোতির্ময় হালত দেখে মুগ্ধ হয়ে সকলেই তাঁর কাছ থেকে তরীক্বতের তালিম ও ছবক নিতে শুরু করেন। পরক্ষণেই তালিবদের আত্মোৎকর্ষিত অবস্থা দেখে সকলেই বিস্মিত! বছরের পর বছর, তিনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধারাবাহিক ছিলেন। তৎমধ্যে বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম, মায়ারমারের আরাকানে, ভারতের এলাহাবাদ, পূর্ণিয়া ভুপাল, করাচি ও মুম্বাইসহ নানান অঞ্চলে। আয়নায়ে মুনিরী বইয়ের এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি চট্টগ্রামে তরীক্বতের তাবলীগে আসলে প্রথমেই হালিশহর দরবারে আসতেন এবং স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সময় হালিশহর হয়ে আজমগড় রওনা হতেন। উল্লেখ্য যে, হালিশহর দরবারের পীর হজরত হাফেজ ছৈয়দ মুনিরুদ্দীন নুরুল্লাহ (রহ.) কে তিনি ১৯১৪/১৫ সালের দিকে সাত তরিকার খেলাফত বখশিশ করেন। তাঁর অক্লান্ত ত্যাগ ও পরিশ্রমের বদৌলতে আল্লাহ পাক এ তরীকতের বাগান কে জান্নাতের বাগানে রূপায়ন করেছেন। এ মকবুল তরীকার সিলসিলার মধ্যদিয়ে হাজারও পীর—আউলিয়ার জন্ম হয়েছে। যাদের শিক্ষাদানে হাজারোও গোমরাহি মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেছেন।
জীবিকা নির্বাহঃ-
পৃথিবীতে এমন কোন খাঁটি পীর-আউলিয়া ও সূফি দরবেশ নেই যারা জীবনের কঠিন সময়ে অর্থকষ্টে ভোগেনি। অভাব আধ্যাত্মিকতার পরিপূরক বিশেষ। আল্লাহ তা’লা বান্দাদের বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন তম্মধ্যে অর্থকষ্ট অন্যতম। তিনি এবং তাঁর পিতা মাঠে কৃষিকাজ করতেন এবং জীবিকা নিবার্হ করতেন। তােঁদর চাষাবাদের প্রচুর জমি ছিলো। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা এ পেশাটি তিনি আজীবন করে গেছেন। বর্তমান সময়ের পীর-মুরিদীর নামে কুসংস্কারের ঘোর বিরোধী ছিলেন। কায়িকশ্রম করে সংসার চালাতেন। এ সিলসিলার অধিকাংশ পীর বুজুর্গ অর্থকষ্টে ছিলেন। তাঁরা কায়িকশ্রম ও ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষকতা করে জীবন চালাত। এখনও এ তরীক্বতের জংশনে এ ধারা চলমান আছে। অদূর ভবিষৎ সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ.) ভালো জানেন।
আধ্যত্মিকতা চর্চাঃ-
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, তার সময়ের প্রতিটি মিনিট তার পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। আজ অবধি, সমস্ত আধুনিক সুফি ছাত্রদের জীবনে এটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। মাগরেবের নামাজ আদায় করার পর তিনি এক ঘণ্টা ধ্যানে বসতেন, তারপর এশার নামাজ পড়তেন, এরপর দুরূদ শরীফ পাঠ করতেন, এতে প্রায় নব্বই মিনিট সময় লাগত। তারপর তিনি রাতের খাবার খেতেন, তারপরে তার ছাত্রদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করতেন। তিনি ছাত্রদের কিছু সময়ের জন্য তার সাথে রাখতেন, তারপরে রাত এগারোটায় বলতেন, ‘যাও এখন ঘুমাও’। তবে তিনটায় ঘুম থেকে উঠো”। তিনি ৩টার আগেই উঠে যেতেন এবং তাহাজ্জুদের নামায ও যিকরের জন্য মসজিদে যেতেন। বেশিরভাগ রাতেই তার সময়সূচী ছিল এমন, তবে মাঝে মাঝে তিনি এশার নামাজের পরে ধ্যানে বসতেন এবং রাতভর তার অনুশীলন চালিয়ে যেতেন, ভোর পর্যন্ত। সকালে বিশ্রাম নিতেন এবং তার ফসলের তত্ত্বাবধানের সাথে সম্পর্কিত কাজগুলি করতেন। মাঠের বাইরে থাকাকালীন, তার ছাত্ররা তার সাথে যেত এবং তিনি পড়াতে থাকবেন। তিনি দুপুরের খাবার, জুহরের নামাজ, ধ্যান ও কোরআন তেলাওয়াত এবং আধ্যাত্মিক কাজের জন্য বিকালে বিরতি নিতেন। তারপর কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর আবার মাঠে ফিরতেন।
যাঁরা শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেনঃ-
এ মহান আত্মিক শুদ্ধ পুরুষ দুনিয়াতে ৪৪ জন খলিফা রয়েছে। তৎমধ্যে ১৫ জনই চট্টগ্রামের। যাঁরা হলেন, চুনতির মাওলানা নজির আহমদ, হালিশহরের হাফেজ ছৈয়দ মুনিরুদ্দীন নুরুল্লাহ, বোয়ালখালীর মাওলানা আবদুল জব্বার, বাঁশখালীর মাওলানা খলিল আহমদ/খলিলুর রহমান, চুনতির মাওলানা ফজলুল হক, সাতকানিয়ার মাওলানা ফজলুর রহমান, আনোয়ারা জুঁইদন্ডীর মাওলানা শরফুদ্দীন চিশতি, কুতুবদিয়ার মাওলানা জামাল উদ্দীন, চুনতির হাকিম মাওলানা কাজী মুনির আহমদ,গারাংগিয়ার মাওলানা আবদুল মজিদ, গারাংগিয়ার মাওলানা আবদুর রশিদ সিদ্দিকী, সাতকানিয়ার মাওলানা আবদুল মাবুদ, দোহাজারীর মাওলানা আবদুল হাকিম, সাতকানিয়ার মাওলানা আকামুদ্দীন, লোহাগড়ার মাওলানা অজীহুল্লাহ।
ওফাত লাভ-
এ মহান মনীষী ১৯৫৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ১৭ রবিউল আউয়াল মাসে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিয়ুন। ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে তাঁকে শায়িত করা হয়। এ রূহানী কর্মযজ্ঞের প্রবাহমান স্রোতধারা যুগযুগ ধরে চলমান থাকুক এটি হোক সকলের প্রার্থনা