আত্মতত্ত্ব মূলক সূফী গান: সাধক কবি শাহজাহান শাহ্

0

আত্মতত্ত্ব মূলক সূফী গান: সাধক কবি শাহজাহান শাহ্

সাধক কবি শাহজাহান শাহ্ হুজুরের লিখিত কিতাব “সংযমের সংবিধান (শাহজাহানগীতি)” এর কালাম গুরু তত্ত্ব – ১, ২, ৩ ও ৪

নফসে ওয়াহেদ পরম আত্মার বিজ্ঞানী ফকির সাধক কবি হযরত শাহজাহান শাহ্ হুজুরের লিখিত কিতাব “সংযমের সংবিধান (শাহজাহানগীতি)” আত্ম তত্ত্ব মূলক সূফী গানের বইয়ে যে সব কালাম গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে ইহার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গুরুতত্ত্ব। যেখানে এই মজ্জুম মহান সাধক দেখিয়েছেন একজন ব্যাক্তির আল্লাপ্রাপ্তির মূল দরজা হচ্ছে কামেল মোকাম সম্যক গুরুর নিকট আশ্রিত হওয়া। যার চরণে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া। সকল জ্ঞান, ধর্ম, যশ, খ্যাতি, অর্জন, প্রশ্ন, যুক্তি, তর্ক ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়াদির উর্ধ্বে উঠে গুরু বাক্য শিকার করা এবং ইহা কর্নে ধারন করা, খালেস অন্তরে গুরুর আদেশ নিষেধ গুলো মেনে চলা।

যার ক্ষেত্রবিশেষ আমরা পবিত্র কোরআনে সুরা কাহফের (৬৫ নং থেকে ৮২ নং) আয়াতের মধ্যে হযরত খোয়াজ খিজির (আঃ) সাথে হযরত মুসা (আঃ) সঙ্গ করার ঘটনা আল্লাতায়ালা স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন। সাধনা স্তরের প্রথম ধাপই হলো কোন কামেল মুর্শেদের নিকট মুরিদ হওয়া। যার ফলশ্রুতিতে গুরুবাক্য মোতাবেক ধাপে ধাপে কর্ম করে গুরুর কলব থেকে রূহানী ফয়েজ তাওয়াজ্জু হাসিল করা। যেখানে কিনা আর কোন বাজ্যিক বা মৌখিক উপদেশের প্রয়োজন পড়ে না। সুতরাং তাই সাধক কবি শাহজাহান শাহ্ হুজুর উনার গুরুত্ব মূলক কালামে সর্বপ্রথম কামেল পীরের বাক্যকে মেনে চালার কথা বলেছেন ইহার উপর যথাযথ ভাবে গুরুত্ত্বআরোপ করেছেন।

নিম্নোক্ত নফসে ওয়াহেদ ফকির সাধক কবি হযরত শাহজাহান শাহ্ হুজুরের “সংযমের সংবিধান (শাহজাহানগীতি)” এর গুরু তত্ত্ব মূলক কালাম গুলো দেওয়া হলোঃ-

গুরু তত্ত্ব:১

অমূল্য ধন মুর্শিদ রতন,
পাইলে হয় উজ্জ্বল জীবন-
যে পাইয়াছে হইয়াছে সে,
পরশের মতন।।

রাজা-বাদশা পায় না তারে,
সৎ ভাব নাই যার অন্তরে-
সংযমে পায় সে ধন,
কু-স্বভাবে হারায় মূলধন।।

ছাড়িয়া দুনিয়ার লোভ,
মুর্শিদের রুপে দিলে ডুব-
ইন্দ্রিয় জয় হইলে খুব,
ছবুর হয়ে থাকবে তখন।।

আদেশ পালনে সবই পাবি,
নিষেধ কর্ম করে সবে হারাবি-
রাজ হংসের মত দুগ্ধ খাবি,
রাখবি যদি অমূল্য ধন।।

মণি মুক্তা দুনিয়ার ধন,
সেই ধন পাইলে তুচ্ছ এই ধন-
পাইলে একা থাকে সেই জন,
তারে দেখলে সমন পালায় তখন।।

শাস্ত্র ছাড়া শিক্ষা করে,
বিধি ছাড়া কর্ম করে-
শাহ্জাহান স্বরূপ পাইলেন যখন,
ইলমে লাধুনী হাসিল হইল তখন।।

গুরু তত্ত্ব:২

তারে তারে তার মিশিলে,
ঘরে আলো জ্বলবে-
তারে তারে তার না মিশিলে,
অন্ধকারে থাকবে।।

সু-সন্ধানে তার টানিয়া,
সারা বাড়ি ওয়েল্ডিং করিয়া-
আপন ঘরে টিউব লাগাইয়া,
সুইচ দিতে হবে।।

মেইন সুইচ ঠিক করে,
নেগেটিভ পজেটিভ আলাদা করে-
বিস্ফোরন ঘটলে পরে,
সবই বাতিল হবে।।

আইন-শৃঙ্খলা মতে হইলে,
সরকারি আদেশ পাইবে-
কাটাউট লাগাইলে,
হঠাৎ বন্ধ করতে পারবে।।

সরকারি আদেশ যারা পায়না,
তার টানিলে বিদ্যুৎ দেয়না-
পারমিশন যারা পায় না,
তারা বসে ভাবে।।

শাহ্জাহান কয় ধনী যারা,
সুন্দর বাড়ি সাজায় তারা-
সর্বস্ব বৃথা বিদ্যুৎ ছাড়া,
যার বিদ্যুৎ সেই নিবে।।

গুরু তত্ত্ব:৩

মানুষ ধরে সবকিছুই অর্পন করে,
মেরাজ কর রফ রফে চরে-
আরশ মহল্লায় গেলে পড়ে,
বায়াত হইল মানুষের হাতে হাত ধরে।।

সৃষ্টির আগে পরোয়ারে,
মানুষেরি রূপ নেহারে-
আদেশ করলেন ফেরেস্তারে,
আমার ছুরুতে আদম তৈয়ার করে দেখ তারে।।

জাতে জাত তৈয়ার করে,
নিজ ছুড়ত ছেড়ে ঢুকল পরে-
নয়বার আসলো নয়বার গেল,
তার পরে বাহির হইল নারে।।

স্রষ্টা গেল লুপ্ত হওয়া,
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ বানাইয়া-
গুপ্ত বিষয় লও জানিয়া,
দেখা পাবে মানুষ ভজলে পরে।।

হায়াতুল মুরছালীন নবী,
তারে ধরলে আমারে পাবি-
আরেফ ব্যক্তি আল্লাহ দেখবি,
আদম ছুরুতে আল্লাহ নিজ জবানে প্রমাণ করে।।

মানুষে মানুষ মিশিয়া,
শাহ্জাহান কয় কায়াছায়া ভাগ করিয়া-
অচিন মানুষের চিত্র নিয়া,
পার হইতে হইবে রে।।

গুরু তত্ত্ব:৪

গুরুর জিহ্বা শিষ্যের কর্ণ
বীজ মন্ত্র লাগাতে হয়-
সেই ফল খাইলে অমর হইবে,
আমল করে খাইতে হয়।।

লিঙ্গ জুনি সঙ্গম হইলে,
আচানক এক ফল ধরিলে-
কামভাবে লিপ্ত হইলে,
ফলে মূলে বিনষ্ট হয়।।

কামে প্রেমে একই ভান্ড,
ঠিক থাকা যায়না ভীষণ কষ্ট-
বে-আমলে হয় সমূল নষ্ট,
তাই নিষেধ কর্ম ছাড়তে হয়।।

ইছমে আযম যারে বলে,
পরম আত্মার সাথে আছে মিলে-
জিকির ধরে আলাদা হলে,
অমর আত্মা অর্জন হয়।।

নামের স্বরূপ যে দেখিল,
তার ইছমে আযম হাসিল হইল-
পলকে তার মেরাজ হল,
নিসকামে সদায় রয়।।

শাহ্জাহান সাধক বলে,
রতি রনে জয় হইলে-
আসা-যাওয়া নিজের বলে,
পূর্ণ সাধক তারে কয়।।

টীকাভাষ্যঃ-
[নফসে ওয়াহেদ ফকির সাধক কবি শাহজাহান শাহ্ হুজুরের “সংযমের সংবিধান (শাহজাহানগীতি)” কিতাবে প্রায় অধিকাংশ কালামের মধ্যেই গুরুবাদ নিয়ে নিগূঢ় তত্ত্ব দিয়েছেন। তবে এখানে তিনি যে সকল কালামের নামকরণ করেছেন গুরু তত্ত্ব নিয়ে ইহাই এখানে হুবহু দেওয়া হয়েছে।]

  • তথ্য সূত্রঃ- “সংযমের সংবিধান (শাহজাহানগীতি)”
  • লেখকঃ- নফসে ওয়াহেদ ফকির সাধক কবি হযরত শাহজাহান শাহ্ হুজুর।

বিঃদ্রঃ- নফসে ওয়াহেদ পরম আত্মার বিজ্ঞানী ফকির সাধক কবি শাহজাহান শাহ্ হুজুরের “সংযমের সংবিধান (শাহজাহানগীতি)” সূফী আত্ম তত্ত্ব মূলক গানের বইটি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস কর্তৃক রেজিস্ট্রারকৃত এবং গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দ্বারা স্বীকৃত। কেহ যদি এই বইয়ের বাণী নকল করে অথবা নিজের নামে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রচার করে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইন অনুযায়ী শাহজাহানপুর দরবার শরীফের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে উল্লেখ্য এই যে কেহ যদি এই কালাম গুলো নিজস্ব সুরে গায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অন লাইন বা অফ লাইনের মাধ্যমে প্রচার করে কিংবা কোন লেখকগন নিজের বইয়ে রেফারেন্স সহকারে বাণী গুলো উদ্ধৃতি করে ইহার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যা অবশ্যই প্রশংসনীয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

নিবেদক: Jamal Hossain Rifat

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel

Comments

Please enter your comment!
Please enter your name here